| |
               

মূল পাতা রাজনীতি জাতীয় পার্টি বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের বিনা সুদে ঋণ দিতে হবে : জিএম কাদের


বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের বিনা সুদে ঋণ দিতে হবে : জিএম কাদের


রহমত নিউজ ডেস্ক     04 April, 2023     09:47 PM    


জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের এমপি বলেছেন, বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা সারা বছর ঈদের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। ঈদের আয় দিয়ে তারা সারা বছর সংসার চালান। নিজের সকল পূঁজি, স্বল্প সময়ের জন্য উচ্চ হারের সুদে টাকা নিয়ে ঈদের বাজারের জন্য মালামাল কেনাকাটা করেন। হঠাৎ ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে সকল দোকান ভস্মিভূত হয়ে গেছে। ৪ হাজারের ওপরে দোকান পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন দুই হাজার কোটি টাকার মালামাল পুড়ে একদিনেই তারা ফকির হয়ে গেছে। দূর্যোগে যারা কষ্ট পাচ্ছেন আমরা তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি সরকারের কাছে আবেদন, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। দরকার হলে বিনা সুদে অথবা স্বল্প সূদে তাদের ঋণ দিতে হবে।

আজ (৪ এপ্রিল) মঙ্গলবার বিকালে হোটেল ইম্পেরিয়াল মিলনায়তনে জাতীয় পার্টি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ইফতার পূর্ব আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক এ আদেল, প্রাদেশিক বিষয়ক সম্পাদক মোঃ খোরশেদ আলম খুশু, কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ মাহবুবুর রহমান খসরু, আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান মিয়া।

জিএম কাদের বলেন, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে কেউ ইচ্ছে করলেই ভালো কাজ করতে পারছে না। আমরা সাহায্য দিতে বলেছি, দেখা যাবে এমন লোককে সাহায্য দেয়া হচ্ছে এখানে যার দোকানই নেই। যারা সরকারী দল করেন তারাই সাহায্য ও ঋণ পাবেন। আবার যার ঋণ দরকার তিনি পাবেন না। অথবা ঋণ পেতে হলে অর্ধেক টাকা ঘুষ হিসেবে দিতে হবে। দু:খের বিষয় এমন বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। ভূক্তভোগীরা দুঃখ-কষ্টে যাদের কাছে পাবে তারা লুটপাট করবে। গেলো বছর কন্টেইনার ডিপোটে অগ্নিকান্ডে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ মারা গেছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে গেছেন। আমরা দাবি করেছিলাম, দুর্ঘটনাকে স্বাভাবিক ঘটনা মনে না করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে? গেলো বছর ২৪ হাজার অগ্নিকান্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারের মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। তদন্ত কমিটি গঠন হয় কিন্তু তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কারো শাস্তি হয়েছে বলে আমরা জানি না। ৪ মার্চ চট্টগ্রাম রি-রোলিং মিলে অক্সিজেন প্লান্ট বিস্ফোরণে ৪ জন মারা গেছেন, সাইন্সল্যাব এলাকায় ৫ মার্চ ৫-৬ জন মারা গেলো। আবার ৭ মার্চ সিদ্দিকবাজারে বিস্ফোরণে অনেক মানুষ মারা গেলো। এগুলো যদি দুর্ঘটনা হয় তাহলে ভবিষ্যতে যাতে দূর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়ার দায়িত্ব সরকারের। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে হাজার কোটি টাকার মালামাল ধংস হয়ে গেলো, এর দায়-দায়িত্ব কার? আগামীকাল যে এমন দুর্ঘটনা ঘটবে না তার কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে? কোন প্রাণহানী হয়নি, কিন্তু প্রাণহানীর চেয়েও খারাপ অবস্থা হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই, সম্পদের নিরাপত্তা নেই। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে মানুষের নিরাপত্তা ও জীবন মানের উন্নয়ন নিশ্চিত করা। সেজন্যই দেশের মানুষ সরকারকে দেশ চালাতে টাকা পয়সা দেয়। সরকারের বাড়ি. গাড়ি, থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করে দেশের গরিব মানুষ। সরকার দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের পরিবর্তে  নিজেদের নিরাপত্তা ও উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত। পুলিশ সহ সকল বাহিনীর লোক বাড়ছে, জনবল দ্বিগুণ করা হচ্ছে। তারপরও কেন এত আগুন লাগবে? এত ক্ষয়ক্ষতি হবে? কেন চুরি-ছিনতাইয়ের শিকার হতে হবে? কেন সরকারি দলের নেতৃবৃন্দের দ্বারা সাধারণ মানুষ অপমাণিত হবে? আপনাদের উন্নয়ন হবে, দেশে-বিদেশে বাড়ি হবে এজন্য তো আমরা আপনাদের রাখি নাই। দেশের মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।  প্রতিদিন প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বাড়ছে। মানুষের আয় বাড়ছে না, তারা চাকরি ও ব্যবসা হারাচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নষ্ট করে ফেলেছে। টাকার দাম কমছে তাই জিনিস পত্রের দাম বাড়ছে। আগে যে টাকায় এক ভরি স্বর্ণ কেনা যেতো সেই টাকায় এখন আধা ভরি স্বর্ণ কেনা যায়। দেশের রিজার্ভ শেষ করার কারণে টাকার দাম কমে গেছে। সরকারের হাতে টাকা নেই। রফতানি আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। ব্যয় কমানোর কারণে বাজারে মালামালের অভাব চলছে, কাঁচামালের অভাব দেখা দিয়েছে। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মেডিকেলে ইকুপমেন্ট পাচ্ছে না। আবার প্রয়োজন মত বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। রিজার্ভ কমলো কেনো? সরকার বিভিন্নভাবে খরচ করেছে, বিভিন্ন প্রকেল্পে অপরিকল্পিত ভাবে ঋণ করেছে। দেশের ধনী মানুষেরা ট্যাক্স দেয় না, গরীব মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে। কিন্তু অনেক গুণ খরচ বাড়ানো কারণে ব্যাংকেও টাকা নেই, ব্যাংকের টাকা পাচার হয়ে গেছে। এখন নতুন করে টাকা ছাপানো হচ্ছে। এ কারণে, টাকার দাম আরেক দফা কমছে। টাকার দাম কমলেই ডলারের দাম বেড়ে যাবে। ডলারের দাম দেড়শো থেকে দুশো হতে পারে। 

তিনি আরো বলেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য বাহিনী বাড়ানো হচ্ছে, পোষ্ট নেই কিন্তু প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। গাড়ি-বাড়ি দেয়া হচ্ছে শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য। মানুষের অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। গণমুখি সরকার হলে জনগণকে বাঁচাতে চেষ্টা করতো। গণমুখি সরকার হলে মানুষ যাতে দুমুঠো খেয়ে জীবন বাচাতে পারে সেই চিন্তা করতো। আমরা রেশনিং এর ব্যবস্থা করতে বলেছি। কিন্তু মাসে এক বা দুইবার কার্ডের মাধ্যমে নিত্যপণ্য সরবরাহ করছে। এতে মানুষের খুব কম চাহিদা মিটছে। আমরা চাই দেশের মানুষ যে প্রত্যাশায় সরকার গঠন করে সেই প্রত্যাশা যেন পূরণ করা হয়। কেউ সত্য কথা বললে তখন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করা হয়। সত্য বললে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করা হয়। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের কণ্ঠরোধ করতে হয়রানী করা হচ্ছে। গণতন্ত্রের কথা হচ্ছে, জনগণই দেশের মালিক। তারাই সরকার নির্বাচিত করবে। সরকারের সমালোচনা করা আমাদের অধিকার নয়, এটা আমাদের দায়িত্ব। সরকার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না করলে, সরকার পরিবর্তনের ক্ষমতা থাকতে হবে সাধারণ মানুষের। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্র। এখন প্রশ্ন হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র আছে? পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দেশ পরিচালনার সময় দেশে সুু-শাসন ছিলো, দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পেরেছেন। আইনের শাসন ছিলো। মানুষে মানুষে বৈষম্য ছিলো না। আমরা আবারো পল্লীবন্ধুর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবো।

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক জহিরুল আলম রুবেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, এটিইউ তাজ রহমান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, আলমগীর সিকদার লোটন, মোস্তফা আল মাহমুদ, চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা নুরুল ইসলাম ওমর এমপি, খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস-চেয়ারম্যান সালমা হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, লুৎফর রেজা খোকন, এইচ এম শাহরিয়ার আসিফ, যুগ্ম-মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, বেলাল হোসেন, এডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাসানী, সম্পাদক মন্ডলির সদস্য নির্মল দাস, আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন সরকার, মোঃ হেলাল উদ্দিন, এনাম জয়নাল আবেদীন, আবু জায়েদ আল মাহমুদ মাখন সরকার, সুলতান মাহমুদ, গোলাম মোস্তফা, আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, যুগ্ম সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য আজহারুল ইসলাম সরকার, সুজন দে, আক্তার হোসেন দেওয়ান, এমএ সোবহান, সরফুদ্দিন আহমেদ শিপু, মাশুক রহমান, সমরেশ মন্ডল মানিক, শেখ মোঃ দ্বীন ইসলাম, শাহনাজ পারভিন, ইব্রাহিম আজাদ, সদস্য কাজী মামুন, সোলায়মান সামি, শেখ মোঃ সরোয়ার, জায়েদুল ইসলাম জাহিদ, এড. মোঃ আবু ওয়াহাব, এড. মোঃ নজরুল ইসলাম, আব্দুর রহিম।